স্বদেশ ডেস্ক: বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নিবাচন দাবি ও সম্প্রতি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে বিএনপি। এভাবে চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে চায় দলটি। এরই মধ্যে তিনটি বিভাগে সমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। আসন্ন কুরবানি ঈদের আগেই অন্য সব বিভাগের সমাবেশ সম্পন্ন করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। ১৮ জুলাই বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলের এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ছাড়াও সমাবেশে সর্বাধিক জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব সমাবেশের মাধ্যমে উল্লিখিত দাবিতে জনসমর্থন যেমন জোরালো হবে। তেমনি দীর্ঘ দিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মনোবলও চাঙ্গা হবে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা। এ ছাড়া অব্যাহত ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীসহ সামর্থ্যবান ব্যক্তিদেরকে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি। একই সাথে দল পুনর্গঠনের কাজও অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।
প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার মুক্তি এবং অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি ও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, অব্যাহত গুম-খুন-ধর্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতির প্রতিবাদে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এসব সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় এবং জেলার নেতারা বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন ঢাকার সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া মাঠ প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক। ওই দিনই তাকে কারাগারে নেয়া হয়। কারাগারে অসুস্থ হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একাধিকবার ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। একই সাথে আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছেন দলের সিনিয়র আইনজীবীরা।
বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি আগামী অক্টোবরের মধ্যে দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে দল পুনর্গঠনের কাজও সেরে নিতে চান তারা। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে শূন্য পদগুলো পূরণ, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন এবং জেলা কমিটিগুলো গঠন করা হচ্ছে। সমাবেশ শেষে জেলাপর্যায়ে সমাবেশেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। তার আগে আসন্ন কুরবানি ঈদের আগেই সবগুলো বিভাগীয় শহরে সমাবেশ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদেরকে সমাবেশের তারিখ ঠিক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে তারিখ চূড়ান্ত করে কেন্দ্রকে জানাবেন। এসব সমাবেশ বিএনপি এককভাবে পালন করতে চায়। তবে সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।
জানা যায়, গত ২২ জুন রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যার অংশ হিসেবে প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবে বিএনপি। এরপর গত ১৩ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির ফের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কর্মসূচি প্রণয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিশদ আলোচনা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হবে শিগগিরিই। কর্মসূচির মধ্যে ১৮ জুলাই বরিশালে, ২০ জুলাই চট্টগ্রাম ও ২৫ জুলাই খুলনায় সমাবেশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলো সমাবেশ করতে পারব। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে আমানতকারীসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার বিষয়ে ভবিষ্যতে দলীয় কর্মসূচি দেয়া হবে।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় বলেন, তারা ২০ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভাগীয়, থানা-উপজেলা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সাথে প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছেন। সমাবেশের জন্য চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান ও নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্থানে তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু গত ১৫ জুলাই বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ করতে খুলনার শহীদ হদিস পার্ক, জিইসি মোড়, শিববাড়ি মোড় ও সোনালি ব্যাংক চত্বরের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্টরা অনুমতি দিয়ে জনসভা সফল করতে সহায়তা করবেন। ইতোমধ্যে খুলনায় বিভাগীয় ও জেলাপর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক সভা শেষ হয়েছে। এখন উপজেলা-থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে প্রস্তুতি বৈঠক করছেন। তিনি জানান, সমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি ও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যহারের দাবি জানানো হবে।
এ দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত বর্ষণে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বন্যা বিস্তৃত হয়ে দেশের মধ্যভাগসহ প্রায় সব জেলা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী। খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কটে হাহাকার করছে। কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও এখনো ত্রাণ তৎপরতার কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের বিত্তবান মানুষদের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বিএনপি দলের চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গিয়ে ত্রাণসহায়তা দেবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু গত ১৫ জুলাই বলেন, উত্তরাঞ্চলে ভারী বর্ষণে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এখন ওই এলাকায় বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসহায়তা দেয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। শিগগিরই স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসহায়তা দেয়া হবে। বন্যা শেষ হলে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।